স্বাগত নববর্ষ ১৪৩২, দূরীভূত হোক সকল অন্যায়-অবিচারপা
–হাড়ের কন্ঠ নিউজ ডেস্ক
মঙ্গলবার ১৫এপ্রিল ২০২৫
কালের পরিক্রমায় পুরাতন বছর বিদায় নিয়ে শুরু হলো আরেকটি নতুন বছর। উদিত হলো নতুন বছরের প্রথম সূর্য।
আজ নতুন বছরের প্রথম দিন পহেলা বৈশাখ। পার্বত্য চট্টগ্রামে চলছে বৈ-সা-বি (বৈসু, সাংগ্রাই, বিঝু, বিষু, বিহু...) উৎসবের তৃতীয় দিন। চাকমারা এই দিনটি ‘গোজ্জেপোজ্জে বিঝু/দিন’ হিসেবে পালন করে থাকে। আজকের দিনটিতে ধর্মীয় প্রার্থনাসহ গ্রামের বয়স্ক মুরুব্বীদের খানা-পিনার আয়োজন করা হয়। অপরদিকে ত্রিপুরা ও মারমা জাতিসত্তার মূল উৎসব যথাক্রমে ‘বৈসুমা’ ও ‘আক্যেই’ পালিত হচ্ছে।
গোটা বিশ্ব এখন নানা সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এখনো চলমান। ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর চলছে একের পর এক ইসরায়েলি হামলা, চলছে গণহত্যা। এর ফলে ফিলিস্তিনিদের জীবন চরমভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
এদিকে, বাংলাদেশে ছাত্র-গণঅভ্যূত্থানে ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনা সরকারের পতন পর বর্তমানে নোবেলজয়ী ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব পালন করছে। কিন্তু দেশের সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখনো পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি। ‘মব’ সৃষ্টি করে অরাজকতা চলমান রয়েছে। নারীর ওপর সহিংসতা বেড়েছে। মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে উগ্র ধর্মান্ধগোষ্ঠিগুলো। এ গোষ্ঠিগুলো নানাভাবে প্রগতিশীল কর্মকাণ্ডে বাধা দিচ্ছে। নারীদের স্বাভাবিক চলাফেরায় বিঘ্ন সৃষ্টির অপচেষ্টা চালাচ্ছে।
আগামী জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশে নতুন নতুন রাজনৈতিক দল গঠিত হচ্ছে। ফলে পুরোনো রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে মনস্ত্বাত্তিক দ্বন্দ্ব দেখা দিচ্ছে। এমতাবস্থায় আগামীতে বাংলাদেশে আরো দ্বন্দ্ব-সংঘাত বৃদ্ধির সমূহ সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
অন্যদিকে, পার্বত্য চট্টগ্রামের দমনমূলক পরিস্থিতি আগের মতোই রয়েছে। ফ্যাসিবাদী হাসিনা সরকারের পতনের পর পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষ সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক পরিবেশ আশা করেছিল। কিন্তু তা হয়নি। আগের মতোই সেখানে সেনাশাসন ও রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়ন অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি দলগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব-সংঘাতও বিদ্যমান রয়েছে। ফলে পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত পাহাড়ি জাতিসত্তাগুলো নানা আশঙ্কার মধ্যে দিন যাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন।
ড. ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের কিছুদিন পর গত বছর ১৯-২০ সেপ্টেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি জনগণ ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক হামলার শিকার হয়েছে। এতে ৪ জন নিহত ও শতাধিক আহতসহ শতশত ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান-ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এ ঘটনার বিচার এখনো হয়নি।
নতুন বছরে পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের প্রত্যাশা- সেখানে (পার্বত্য চট্টগ্রামে) রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়ন, ভূমি বেদখল, নারী নির্যাতনসহ যেসব অন্যায়-অবিচার চলছে সরকার তা অচিরেই বন্ধ করবে এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে যে সমস্যা বিদ্যমান রয়েছে তা যথাযথভাবে সমাধানের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টি করবে।
নববর্ষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ সকলের জীবনে বয়ে আনুক অনাবিল সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি। দূরীভভূত হোক সকল অন্যায়-অবিচার। দূরীভূত হোক সকল হিংসা-বিদ্বেষ, দ্বন্দ্ব-সংঘাত। নিরাপদ হোক সকলের জীবন।