পাহাড়িদের তিন দিনব্যাপী বিজু-বৈসু-সাংগ্রাই তথা বৈসাবি উৎসব দিন গুলো এখনো মিস করি, উৎসব ঘিরে পাহাড় জুড়ে বইছে আনন্দের বন্যা। ফুল ভাসানোর মধ্য দিয়ে পাহাড়ে শুরু হয় চাকমাদের ‘বিঝু’, ত্রিপুরাদের ‘বৈসুক’, মারমাদের ‘সাংগ্রাই’, তংচঙ্গ্যাদের ‘বিসু’ এবং অহমিয়াদের ‘বিহু’ উৎসব।
ছবি চিত্র :মাটিরাঙ্গা খেদাছড়া এলাকায় বিঝু ঘুরার সময় আজম পাড়া ঊজেবং যুব সমাজের যুবক
ভোর থেকে পাহাড়ী নারীরা বাগান থেকে ফুল সংগ্রহ নিয়ে একে একে চলে আসে কাপ্তাই হ্রদে। পুরনো বছরের সব ময়লা, পাপ, বিপদ-আপদ, গ্লানি, ব্যর্থতা ধুয়ে মুছে ফেলতে পানিতে ভাসানো হয় ফুল। এর মধ্য দিয়ে সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা জানানো হয়, নতুন বছরে সবক্ষেত্রে পরিপূর্ণরূপে অর্জন ও শুভ-মঙ্গলের। সৃষ্টিকর্তার কাছে এমন প্রার্থনা জানিয়ে উৎসবের প্রথম দিন কাপ্তাই হ্রদে গঙ্গা দেবীর উদ্দেশে পানিতে ফুল ভাসিয়ে উৎসবের সূচনা করা হয়।
পাহাড়ে পাহাড়ে বৈসাবির আমেজ তিন দিনব্যাপী এই উৎসবের প্রথম দিনকে চাকমারা ‘ফুল বিজু বা ফুল বিঝু’ দ্বিতীয় দিনকে ‘মূল বিজু’ এবং তৃতীয় দিনকে ‘নুয়াবঝর’ বা ‘গোজ্যা পোজ্যা’ দিন বলেন। আর ত্রিপুরারা প্রথম দিনকে ‘হারিকুইসুক’, দ্বিতীয় দিনকে ‘বুইসুকমা’ এবং তৃতীয় দিনকে ‘বিসিকাতাল’ বলে।
উৎসবের প্রথম দিনকে চাকমারা বলে ‘ফুল বিজু বা ফুল বিঝু’। এই দিন বিঝুর ফুল তোলা হয় ও সেই ফুল দিয়ে ঘর সাজানো হয়। দিন শেষে সেই ফুল নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়। বিঝুর সময় ছোট ছেলে-মেয়েরা পরিচ্ছন্ন কাপড় পড়ে দল বেঁধে বাড়ি-বাড়ি বেড়াতে যায়। তারা সবাই বয়স্কদের সম্ভাষণ করেন এবং ঘরের হাঁস-মুরগিকে ধান, চাল ছিটিয়ে খেতে দেওয়া হয়।
এই সময় ঘরে ঘরে রান্না হয় সুস্বাদু ‘পাজন’। হরেক রকম সবজি দিয়ে রান্না করা হয় চাকমাদের বিখ্যাত এই খাবার। এই উৎসবে সবার প্রিয় খাবার এটি। ছেলে-মেয়েরা ঘিলা খেলা, গুদু (হা ডু-ডু) খেলায় মেতে ওঠে। তারা আকাশ প্রদীপ জ্বালায় এবং বাজি ফুটিয়ে আনন্দ করে। বয়স্করা দেশীয় মদ ‘জগরা বা ‘কাঞ্জি পান করেন। বিঝু উৎসবের সময় কোনো প্রাণী হত্যা করা হয় না। তবে নববর্ষের দিন মজার মজার সব খাবারের আয়োজন থাকে। এই দিন ভালো কিছু খেলে সারা বছরই ভালো খাবারের সম্ভাবনা থাকে বলে বিশ্বাস করেন তারা।