কাউখালীতে মারমা তরুণীকে গণধর্ষণের প্রতিবাদে তিন সংগঠনের বিক্ষোভ
রাঙামাটির কাউখালীতে সেটলার বাঙালি কর্তৃক মারমা তরুণীকে গণধর্ষণের প্রতিবাদে এবং ধর্ষকদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি), হিল উইমেন্স ফেডারেশন ও পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘ, কাউখালী উপজেলা শাখা।
আজ শনিবার (১৯ এপ্রিল ২০২৫) দুপুর ১:০০টায় কাউখালী কলেজ রোডের কচুখালী এলাকা থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি উপজেলা চত্বর প্রদক্ষিণ করে এসে কচুখালী ফায়ার সার্ভিসের পাশে সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।
সমাবেশে পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের কাউখালি উপজেলা শাখার সভাপতি অংবাইমা মার্মার সভাপতিত্বে ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কাউখালি উপজেলার সদস্য উমেচিং মার্মার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের রাঙামাটি জেলা সভাপতি রিপনা চাকমা ও কাউখালি উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক একামনি চাকমা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের রাঙামাটি জেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক দীপায়ন চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের কলমপতি ইউনিয়ন কমিটির সভাপতি ক্রাথুইনু মার্মা।
সমাবেশে রিপনা চাকমা বলেন, কাউখালিতে এই ধর্ষণের ঘটনা নতুন নয়। অতীতেও এ ধরনের বহু ঘটনা ঘটেছে। আমরা মনে করেছিলাম জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পরে পার্বত্য চট্টগ্রামে কিছুটা হলেও শান্তি ফিরে আসবে। কিন্তু তা হয়নি।
তিনি বলেন, বিগত সরকারের মতো এখনো প্রতিনিয়ত ধর্ষণ-নিপীড়নের ঘটনা ঘটছে। কিন্তু এসব ঘটনার বিচার হচ্ছে না। তিন দিন অতিবাহিত হওয়ার পরও কাউখালীতে ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত চিহ্নিত ধর্ষকদের গ্রেফতার করা হয়নি। এই বিচারহীনতার কারণে বার বার এ ধরনের ধর্ষণ-নিপীড়নের ঘটনা ঘটছে।
রিপনা চাকমা বিগত ২০১৮ সালে বিলাইছড়িতে দুই মারমা বোনকে ধর্ষণ-যৌন নিপীড়ন ও ২০২৩ সালে কাপ্তাইয়ের রাইখালীতে সেনা সদস্য কর্তৃক মারমা কিশোরীকে ধর্ষণের ঘটনায় বিচার না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন, যদি ফ্যাসিস্ট হাসিনার পরিচয় দিতে না চান তাহলে ধর্ষণের ঘটনার যথাযথ বিচার ও দোষীদের শাস্তি প্রদান করুন।
তিনি সারাদেশে নারীদের নিরাপত্তা ও সম্ভ্রম রক্ষায় এগিয়ে আসার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান এবং চিহ্নিত ধর্ষণকারী ফাহিম গংদের গ্রেফতারপূর্বক বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
একামনি চাকমা সেটলার ফাহিম গং কর্তৃক মারমা তরুণীকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে সংঘবদ্ধভাবে ধর্ষণের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। তিনি অবিলম্বে চিহ্নিত ধর্ষক মো. ফাহিমসহ জড়িতদের গ্রেফতার, বিচার ও শাস্তির প্রদানের দাবি জানান।
দীপায়ন চাকমা বলেন, কাউখালিতে প্রশাসনের নাকের ডগায় মারমা তরুণীকে ধর্ষণের ঘটনা খুবই নিন্দনীয়। এ যাবত ধর্ষণসহ নারী নির্যাতনের ঘটনার বিচার না হওয়ায় এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনা বার বার সংঘটিত হচ্ছে। তাই অবিলম্বে চিহ্নিত ধর্ষক মো. ফাহিম গংদের গ্রেফতার করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাশাসন অপারেশন উত্তরণের ফলে অন্যায় দমন-পীড়ন জারি রয়েছে। ফলে এখানে উৎসবও সুষ্ঠুভাবে পালন করা যায় না। গত ১৩ এপ্রিল উৎসবে অতিথি আপ্যায়নের জন্য জিনিসপত্র কিনে কাউখালী বাজার থেকে ফেরার পথে সেনাবাহিনী গাড়ি চাপা দিয়ে এক যুবককে হত্যার চেষ্টা করেছে। এছাড়া বিভিন্ন জায়গায় অভিযানের নামে ভয়ভীতি প্রদর্শন করেছে। কাউখালীতে মারমা তরুণীকে ধর্ষণের ঘটনাও তারই ধারাবাহিক অংশ বলে তিনি মন্তব্য করেন।
সভাপতির বক্তব্যে অংবাইমা মার্মা বলেন, একজন নারীকে ধর্ষণের পরে মারধর করার মতো ঘৃণ্য ও নিষ্ঠুরতম কাজ আর কী হতে পারে!
তিনি বলেন, পাহাড়ের নারীরা কোথাও নিরাপদ নয়। নিজ বাড়িতে একা থাকা যায় না। সেটলাররা নানাভাবে ওঁৎ পেতে থাকে পাহাড়ি নারীদের ধর্ষণের জন্য। ফলে গোসল করতে গেলে, পানি আনতে গেলে পর্যন্ত ধর্ষণের শিকার হতে হচ্ছে পাহাড়ি নারীদের।
তিনি মা-বোনদের সতর্ক করে দিয়ে বলেন, নিজেদের ইজ্জ্বত, সম্ভ্রম রক্ষার্থে সবসময় প্রস্তুত থাকতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রামের পুরো নারী সমাজকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ধর্ষণকারীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।
তিনি অবিলম্বে ধর্ষক ফাহিম গংদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানান।